এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, তা ছিল শুধু ওয়ার্ম-আপ: অপারেশন সিন্দুর নিয়ে রাজনাথ

0
9


নতুন দিল্লি, ৩০ মে (PTI): পাকিস্তান যদি সত্যিই ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত সন্ত্রাসবাদী হাফিজ সাঈদ ও মাসুদ আজহারকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া—এমনটাই জানালেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং শুক্রবার।

গোয়ার উপকূলে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রান্তে নৌবাহিনীর যোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজনাথ বলেন, পাকিস্তান যদি ভারতের বিরুদ্ধে কোনো ‘অশুভ বা অনৈতিক’ কাজ করে, তাহলে এবার ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি ও রোষের মুখোমুখি হতে হবে।

তিনি বলেন, “আমি আপনাদের সবাইকে বলতে চাই, প্রস্তুতিতে কোনো খামতি রাখবেন না। এতদিন যা হয়েছে, তা ছিল শুধু ওয়ার্ম-আপ; পাকিস্তান যদি আবার সাহস দেখায়, এবার নৌবাহিনীও ঝাঁপিয়ে পড়বে, তারপর পাকিস্তানের কী হবে, তা একমাত্র ঈশ্বরই জানেন।”

রাজনাথ আরও বলেন, “অপারেশন সিন্দুর এখনো শেষ হয়নি, এটা শুধু বিরতি, একটা সতর্কবার্তা। পাকিস্তান যদি আবার একই ভুল করে, ভারতের জবাব আরও কঠোর হবে, এবার আর ওদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগও দেওয়া হবে না।” পাকিস্তানকে বুঝতে হবে, স্বাধীনতার পর থেকে তারা যে ‘বিপজ্জনক সন্ত্রাসের খেলা’ খেলছে, তার সময় শেষ, এবং ভারত এই সমস্যা সমূলে উৎপাটন করতে সব পদ্ধতি ব্যবহার করবে।

তিনি জানান, পাকিস্তানের মাটি থেকে প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ চালানো হচ্ছে এবং ভারত সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সীমান্ত ও সমুদ্র—দুই দিকেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে পারে।

অপারেশন সিন্দুরে ভারতীয় নৌবাহিনীর ভূমিকা তুলে ধরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে ভারত।

তিনি বলেন, যখন ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি ধ্বংস করছিল, তখন ভারতীয় নৌবাহিনীর আগ্রাসী মোতায়েনের ফলে পাকিস্তানি নৌবাহিনী নিজেদের উপকূলেই আটকে পড়ে।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নৌসেনাদের উদ্দেশে রাজনাথ বলেন, অপারেশন সিন্দুর শুধু সামরিক অভিযান নয়, বরং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সরাসরি আঘাত।

তিনি বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যা ভাবতে পারে, আমরা তা ব্যবহার করব; এমনকি এমন কিছু পদ্ধতিও ব্যবহার করব, যা পাকিস্তান কল্পনাও করতে পারে না।”

প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তানের উচিত নিজেদের হাতে নিজেদের মাটিতে থাকা সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর ধ্বংস করা।

“এটা শুরু করা উচিত হাফিজ সাঈদ ও মাসুদ আজহারকে ভারতের হাতে তুলে দিয়ে। ওরা শুধু ভারতের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় নয়, জাতিসংঘের ঘোষিত সন্ত্রাসবাদীর তালিকাতেও আছে,” বলেন তিনি।

মাসুদ আজহার, পাকিস্তান-ভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রধান, ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলা, ২০১৬-র পাঠানকোট এয়ারবেস হামলা ও ২০১৯-র পুলওয়ামা হামলায় ভারতের কাছে ওয়ান্টেড।

হাফিজ সাঈদ, লস্কর-ই-তৈয়বা (LeT) প্রতিষ্ঠাতা, মুম্বাই হামলার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত এবং ভারতের আরও বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী মামলায় ওয়ান্টেড।

রাজনাথ বলেন, “আজ গোটা বিশ্ব স্বীকার করছে, নিজের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ভারতের অধিকার আছে। আজ বিশ্বের কোনো শক্তিই ভারতকে এই কাজ থেকে থামাতে পারবে না।”

পাকিস্তানের বারবার আলোচনার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করেন, “যদি আলোচনা হয়, সেটা শুধু সন্ত্রাসবাদ ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে হবে। পাকিস্তান যদি সত্যিই আলোচনায় আগ্রহী হয়, তাহলে হাফিজ সাঈদ ও মাসুদ আজহারকে ভারতের হাতে তুলে দিক, যাতে ন্যায়বিচার হয়।” অপারেশন সিন্দুরে ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘নীরব সেবা’-র প্রশংসা করে তিনি বলেন, শক্তিশালী ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ পাকিস্তানি নৌবাহিনীকে বন্দরে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছে, না হলে তাদের চরম মূল্য দিতে হতো।

তিনি বলেন, “১৯৭১ তার সাক্ষী, যখন ভারতীয় নৌবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, পাকিস্তান দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছিল।”

অপারেশন সিন্দুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের আঘাত এতটাই শক্তিশালী ছিল, যে পাকিস্তান গোটা বিশ্বকে ভারতের বিরুদ্ধে অনুরোধ জানাতে শুরু করেছিল।” অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটি ও তাদের মনোবল ধ্বংস করেছি, বলেন তিনি, যোগ করেন—আমাদের সেনাবাহিনীর গতি, গভীরতা ও স্পষ্টতা ছিল অসাধারণ।

অপারেশন সিন্দুর শুধু সন্ত্রাসবাদীদের নয়, তাদের পৃষ্ঠপোষকদেরও স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে, বলেন রাজনাথ।

শেষে তিনি বলেন, নিজেদের শর্তে আমরা সামরিক অভিযান থামিয়েছি।

ভারত ৭ মে ভোরে পাহালগাম সন্ত্রাসী হামলার জবাবে নয়টি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালায়।

এরপর পাকিস্তান ৮, ৯ ও ১০ মে ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা করে।

এই হামলার কড়া জবাব দেয় ভারত, পাকিস্তানের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা—এয়ারবেস, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার এবং রাডার সাইটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে।

১০ মে, পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী ঘোষণা করেন, ভারত ও পাকিস্তান স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে সব ধরনের গোলাগুলি ও সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here