অসমের কার্বি আংলং জেলার তালবালিজান গ্রামের নয় বছরের বিনিতা চেত্রী ব্রিটেন’স গট ট্যালেন্ট (BGT) ২০২৫-এ তৃতীয় স্থান অর্জন করে ইতিহাস গড়েছেন। তিনি এই শো-এর ইতিহাসে প্রথম ভারতীয় ফাইনালিস্ট। ৩১ মে ২০২৫-এ সম্প্রচারিত গ্র্যান্ড ফিনালেতে বিনিতার অসাধারণ পারফরম্যান্স বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। মার্চ ২০২৫-এ তাঁর অডিশন থেকেই বিচারক সাইমন কাউয়েল, আমান্ডা হোল্ডেন, আলেশা ডিক্সন ও ব্রুনো টোনিওলিকে মুগ্ধ করেছিলেন এই খুদে শিল্পী, তাঁর নৃত্য ও মার্শাল আর্টের অভিনব সংমিশ্রণে।
অসম থেকে বিশ্বমঞ্চে উত্থান
বিনিতা চেত্রী, অসমের বোকাজান সংলগ্ন তালবালিজান গ্রামের মেয়ে, প্রথম উত্তর-পূর্ব ভারতীয় হিসেবে BGT-র ফাইনালে পৌঁছান। মার্চের অডিশনে Tommee Profitt & FJØRA-র “Eye of the Tiger”-এর তালে তাঁর ব্যাকফ্লিপ ও মার্শাল আর্ট-অনুপ্রাণিত নাচ বিচারকদের দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানাতে বাধ্য করে। আমান্ডা হোল্ডেন তাঁকে “সুপারহিরো” আর ব্রুনো টোনিওলি “ফিয়ার্স লিটল টাইগার” আখ্যা দেন। যদিও তিনি গোল্ডেন বাজার পাননি, তাঁর পারফরম্যান্স ইউটিউবে ভাইরাল হয় এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাঁকে “উজ্জ্বল নক্ষত্র” বলে প্রশংসা করেন। বিনিতার স্বপ্ন ছিল পুরস্কারের £২,৫০,০০০ দিয়ে “পিঙ্ক প্রিন্সেস হাউস” কেনার, যা দর্শকদের মন জয় করে।
সেমিফাইনাল থেকে ফাইনালের সাফল্য
সেমিফাইনালে দর্শকদের ভোটে শীর্ষ দশে উঠে আসেন বিনিতা। ৩১ মে ফাইনালে Lorde-র “Everybody Wants to Rule the World”-এর তালে তাঁর অ্যাক্রোবেটিক্স ও আবেগঘন নৃত্য ফের বিচারকদের দাঁড়িয়ে অভিবাদন আদায় করে। আমান্ডা বলেন, “আমি আশা করি মার্ভেল বা অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি তোমার দিকে নজর দেবে”—বিনিতার সিনেম্যাটিক উপস্থিতি তুলে ধরে। যদিও প্রথম স্থান পান জাদুকর হ্যারি মোল্ডিং ও দ্বিতীয় LED ডান্স ট্রুপ The Blackouts, তৃতীয় স্থান পেয়ে ভারতীয় প্রতিভার ইতিহাসে নজির গড়েন বিনিতা। তিনি বলেন, “আমি খুব খুশি ও গর্বিত।”
পরিবার ও প্রশিক্ষণ
বিনিতার সাফল্যের পেছনে তাঁর বাবা অমর চেত্রী, যিনি ব্রয়লার ফার্ম চালান, বড় ভূমিকা রেখেছেন। গৌহাটি ও জয়পুরে কোরিওগ্রাফার হার্দিক রাওয়াতের কাছে বিনিতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন তিনি। কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ ফাইনালের প্রস্তুতির জন্য ৫ লাখ টাকা সহায়তা দেয়। বিনিতা বলেন, “হার্দিক স্যারের সাহায্য ছাড়া এটা হতো না।” ২০২৪ সালের ডান্স আইকন ২ ওয়াইল্ড ফায়ার প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার-আপ হওয়ার পর থেকেই তাঁর প্রতিভা নজর কাড়ে। বর্তমানে তাঁর ইনস্টাগ্রামে ১১৮ হাজারেরও বেশি ফলোয়ার তাঁর BGT যাত্রা উদযাপন করছেন।
বিশ্বজুড়ে অনুপ্রেরণা
একটি ছোট গ্রাম থেকে লন্ডনের মঞ্চে উঠে আসা বিনিতার যাত্রা উত্তর-পূর্ব ভারতের অপার সম্ভাবনার প্রতীক। মানিকন্ট্রোল, ইন্ডিয়াটুডে-সহ বহু সংবাদমাধ্যম তাঁর গল্প তুলে ধরেছে। তৃতীয় স্থান অর্জন করে বিনিতা নতুন পথিকৃৎ, ভবিষ্যতে নাচ বা বলিউডে তাঁর সম্ভাবনা উজ্জ্বল, এবং তিনি অসমের গর্ব বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিয়েছেন।
-মনোজ এইচ